রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০

শিরক কি ?

 শিরক কি ?

  শিরকের তালিকা দেখে জেনে নিন।


পাঠ ০১;

শিরক হচ্ছে সকল পাপের চাইতে বড় পাপ। যা আল্লাহ তা’আলা যা কক্ষনো ক্ষমা করবেন না। যদি কোন ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যায় তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকতে হবে। শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, যে শিরক মানুষের সব আমাল নস্ট করে দেয়, মানুষকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর ইহা ব্যতীত যাকে ইচ্ছা (তার অন্যান্য অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আন-নিসা ৪: ৪৮)

হাদিসের বর্ণিত আছে “যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরিক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরিক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (মুসলিম-৯৩)

কুরআনে ‍আল্লাহ বলেন,

وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

“যখন লোকমান তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিয়ে বললেনঃ হে বৎস! আল্লাহর সঙ্গে শিরক করনা; কেননা শিরক সবচেয়ে বড় অন্যায় ” (সূরা লোকমান ৩১:১৩)।

মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদাহ -৫:৭২)

আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় নাবীকে সাবধান করে বলেন,

وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

“আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। ”(সূরা যুমার-৩৯:৬৫)

অতএব এ আয়াৎ থেকে আমরা জানতে পারি নাবী (সা) যদি শিরক করতো তাহলে তার সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে যেত অতএব আমরা উম্মতরা কোথায় আছি। সুতরাং শিরক থেকে সাবধান, শিরক থেকে সাবধান, শিরক থেকে সাবধান। হে আল্লাহ, হে বিশ্বজগতের পালনকর্তা তোমার কাছে আমরা যাবতীয শিরক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমীন। ছুম্মা আমীন।

একনজরে আমাদের সমাজে প্রচলিত শিরক


নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল...

1. আহবানের শিরকঃ আহ্বানের শিরক বলতে মানুষের ক্ষমতার বাইরে এমন কোন পার্থিব লাভের আশায় অথবা কোন পার্থিব ক্ষতি হতে রক্ষা পাবার উদ্দেশে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আহবান করা বুঝায়। (সূরা জিন ৭২:১৮, রাদ-১৩:১৪, মারিয়াম-১৯:৪৮)


2. ফরিয়াদের শিরকঃ ফরিয়াদের শিরক বলতে নিতান্ত অসহায় অবস্থায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকাকে বুঝায়। রোগ নিরাময়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা। (সূরা আনফাল-৮:৯, আনকাবুত-২৯:৬৫)


3. আশ্রয়ের শিরক- কোন অনিষ্টকর বস্তু বা ব্যক্তি হতে বাঁচার জন্য আলাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে আশ্রয় নেয়া বা সরনাপন্ন হওয়া। (সূরা ফুসসিলাত/ হা মিম আসসাজদাহ-৪১:৩৬, সূরা মুমিনুন-২৩:৯৭-৯৮, সূরা ফালাক ১১৩:-১-৫, সূরা নাস ১১৪:১-৬)


4. আশা বা বাসনার শিরক- মানুষের অসাধ্য কোন বস্তু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে কামনা করা। যেমন, কোন পিরের কাছে সন্তান কামনা করা। (সূরা আশ-শুআরা-৪২:৪৯,৫১)


5. নামাজের শিরক- রুকু, সিজদাহ, সওয়াবের আশায় কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সামনে বিনম্রভাবে দাঁড়ানো বা নামাজের শিরক বলতে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতগুলো ব্যয় করাকে বুঝান হয়। (সূরা হাজ্জ-২২:৭৭, আনআম-৬:১৬২-১৬৩)


6. তাওয়াফের শিরক- কাবা ঘর ব্যতিত অন্য কোন বস্তুর তাওয়াফ করা।(হাজ্জ-২২:২৯, বাকারাহ-২: ১২৫)


7. তাওবার শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে তাওবা করা। (সূরা নুর-২৪:৩১, আল ইমরান-৩:১৩৫)


8. জবাইয়ের শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই করা। চাই তা আল্লাহর নামেই করা হোক বা অন্য কারো নামে বা নাবী বা জিনের নামে। (সূরা আনআম- ৬:১২১, ১৬২-১৬৩)


9. মানতের শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর জন্য মানত করা। (সূরা-হাজ্জ-২২:২৯, বাকারাহ-২:২৭০, আনআম-৬:১৩৬)


10. আনুগত্যের শিরক- বিনা ভাবনায় শরিয়তের গ্রহণযোগ্য কোন প্রমান ছাড়াই হালাল হারাম জায়েজ নাজায়েজের ব্যপারে আলেম বুজুর্গ বা উপরস্থ কারো সিদ্ধান্ত অন্ধভাবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া।(তাওবা-৯:৩১, আনআম-৬:১২১,আরাফ-৭:৩,)


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্ধভাবে চার মাঝহাবের চার জন মহামতি ইমামের অন্ধ অনুসরণ করাও শিরক। উপরন্তু এই চার জন মহান ব্যক্তি কখনই নিজেকে অন্ধভাবে অনুসরন করতে বলেনি। যদি কোন ব্যক্তি মনে করে বর্তমান যুগে ইসলামিক শাসনব্যবস্থা অচল এবং গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র,পীরতন্ত্র,ধরমনিরপেক্ষ মতবাদ ইত্যাদিই হল আধুনিক পদ্ধতি তাহলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। খ্রিস্টানরা তাদের আলিমদের উপাসনা করত না তবে তারা হালাল হারামের ব্যপারে বিনা প্রমানে তাদের আলিমদের সিদ্ধান্ত মেনে নিত। আর এটিই হচ্ছে শিরক। (তিরমিজি-অধ্যায় ৪৭ হা: নং ৩০৯৫)


11. ভালবাসার শিরক- দুনিয়ার কাউকে এমন ভাবে ভালবাসা যাতে তাঁর আদেশ নিষেধ কে আল্লাহ তাআলার আদেশ নিষেধের উপর প্রাধান্য দেয়া অথবা সমপর্যায়ের মনে করা। প্রকৃতিগত ভালবাসা (খাবার), স্নেহ জাতীয় ভালবাসা (সন্তানের জন্য পিতার), আসক্তিগত ভালবাসা (স্বামীর জন্য স্ত্রীর) ইত্যাদির কোনটাকেই আল্লাহ তাআলার ভালবাসার উপর স্থান দেয়া যাবে না। (বাকারাহ-২:১৬৫, তাওবা-৯:২৪)


12. ভয়ের শিরক- একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে প্রকাশ্যভাবে দুনিয়া বা আখিরাত সংক্রান্ত যে কোন ক্ষতি সংঘটন করতে পারে বলে অন্ধ বিশ্বাস করে তাকে ভয় পাওয়াকে বুঝানো হয়। মানুষ, মূর্তি, জিন ইত্যাদির অনিষ্টতা থেকে ভয় পাওয়া শিরক। প্রভাবশালি শাসকের ভয়ে ভাল কাজ বা জিহাদ হতে দূরে থাকা ছোট শিরক। তবে শত্রুর ভয়, বাঘের ভয় ইত্যাদি স্বাভাবিক ভয় শিরকের অন্তরভুক্ত নয়। (সূরা আনাআম- ৬:৮০-৮১, হুদ-১১:৫৪-৫৫, তাওবাহ-৯:১৩)


13. ভরসার শিরক- মানুষের অসাধ্য ব্যপারসমুহের ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো প্রতি ভরসা করা। কারো সমস্যা দূরীকরণ, চাকরি লাভ, রোগমুক্তি ইত্যাদি ব্যপারে আল্লাহর উপরেই ভরসা রাখতে হবে। দান, সাদাকার ব্যপারে নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তির উপর ভরসা ছোট শিরক। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক তাঁর কর্মচারীদের উপর মালামাল উৎপাদন বা কোন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ভরসা করতে পারে। তবে সম্পূর্ণরূপে ভরসা করা শরিয়াতে জায়েজ নয়।(মায়িদাহ-৫:২৩, ইউনুস-১০:৮৪)


14. সুপারিশের শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে পরকালের মুক্তির জন্য সুপারিশ কামনা করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (জুমার-৩৯:৪৪, আনাআম-৬: ৫১, বাকারাহ-২:২৫৫)


15. হিদায়াতের শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ কাউকে হিদায়াত করতে পারে এমন বিশ্বাস করা অথবা কারো নিকট হিদায়াত কামনা করা। (বাকারাহ-২:২৭২, ইউসুফ-১০:১০৩)


16. সাহায্য প্রার্থনার শিরক- মানুষের সাধের বাইরে কোন কাজ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট কামনা করা। (ফাতিহা-১:৫)


17. কবরের শিরক- কবরে শায়িত কারো জন্য ইবাদাত ব্যয় করা। অর্থাৎ সেখানে সালাত আদায় করা, সিজদাহ করা শিরক (মুসলিম-৯৮৯) তাঁর নিকট কিছু চাওয়া। তাঁর (ওসীলায়) মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে কিছু চাওয়া। সেখানে মসজিদ নির্মাণসহ আরও অসংখ্য শিরক বিদ্যমান। (নুহ-৭১:২৩, ) (বুখারি- ৪২৭,২৮)


18. আল্লাহর অবস্থান সম্পর্কিত শিরক- আল্লাহ মুমিনের অন্তরে বিরাজমান মনে করা। আল্লাহ সবার অন্তরে বিররাজমান মনে করা। আল্লাহ সকল বস্তুর মাঝে লুকায়িত মনে করা। আল্লাহ সম্পর্কে সহিহ আকিদা হল, তিনি আরশের উপর অবস্থান করছেন। তাঁর আকার আছে কিন্তু তিনি তাঁর মত।তার সদৃশ (মত)কেউ নেই। (মূলক- ৬৭:১৬-১৭, , ইমরান- ৩:৫৫, আরাফ- ৭:৫৪)


19. দেখা ও শোনার শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মানুষ হোক নাবি বা রসুল সব শুনতে বা দেখতে পান এমন মনে করা শিরক। (সূরা ইউনুস- ১০:৬১, তাহা-২০:৪৬)


20. কিয়ামতের শিরক- কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কোন নাবি, রসুল, পীর, অলি, ইত্যাদি মানুষরা অন্যান্য মানুষদের আজাব হতে বাচাতে পারবে এটা মনে করা শিরক। এছাড়া অন্য কেউ মানুষকে আল্লাহর আজাব হতে কাউকে ক্ষমা করাতে পারবে এমনটা মনে করাও শিরক। (সূরা তাহরিম- ৬৬:১০, শুআরা- ২৬:২১৪, তাওবাহ- ৯:৮০)


21. গায়েব জানার শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মানুষ হোক নাবি, রসুল, বুজুর্গ গায়েব জানেন এমনটা বিশ্বাস করা শিরক। (সূরা নামল- ২৭:৬৫, সূরা আনআম- ৬:৫০-৫৯)


22. মানুষের অন্তরের কথা- আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ মানুষের মনের কথা জানেন না। এর বিপরীতে বিশ্বাস করা শিরক। (সূরা মুলক- ৬৭:১৩,১৪)


23. আল্লাহ ছাড়া সন্তান সন্ততি কেউ দিতে পারে- আল্লাহ যাকে চান সন্তান দিতে পারেন। অন্য কারো এই ক্ষমতা নেই। (সূরা শুরা- ৪২:৪৯-৫০)


24. আল্লাহ ছাড়া সুস্থতা- একমাত্র আল্লাহ তাআলাই মানুষকে সুস্থতা দান করতে পারেন, অন্য কেউ নয়। (সূরা শুআরা- ২৬:৭৮-৮২)


25. কাজ করার শিরক- আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ ইচ্ছা করলেই কোন ভাল কাজ করতে পারবে বা কোন খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবে এমন মনে করা শিরক। (সূরা হুদ-১১: ৮৮)


26. ক্ষতির শিরক- আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ কারো ক্ষতি করতে পারে এমনটা মনে করা শিরক। (সূরা ফাতহ- ৪৮:১১)


27. জীবন মৃত্যু- আল্লাহ ছাড়া কেউ কাউকে বাঁচাতে পারে বা মারতে পারে এমন মনে করা শিরক। (সূরা মুমিন- ৬৮)


28. আল্লাহ ছাড়া সবাই মৃত- যদি কেউ মনে করেন আল্লাহ ছাড়াও অন্য কোন নাবি,রসুল,গাউস,কুতুব সর্বদা জীবিত রয়েছেন তাহলে সে শিরক করছে। (সূরা রাহমান- ৫৫:২৬-২৭,সূরা ইমরান- ৩:১৮৫,১৪৪, সূরা জুমার- ৩৯:৩০)


29. আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ বিশ্ব পরিচালনা করেন- কোন নাবি, রসূল, গাউস, কুতুব, ওলি বিশ্ব পরিচালনায় অংশ নেন, একথা মনে করা শিরক। আল্লাহ তাআলা সময়কেও নিয়ন্ত্রন করেন। তাই সময় বা যুগকে গালি দেয়া গর্হিত কাজ। (সূরা রাদ- ১৩:২,সূরা ইউনুস- ১০:৩১, সূরা সাজদাহ-৩২:৫)


30. অন্তরের পরিবর্তন- একমাত্র আল্লাহ তাআলাই কারো অন্তরের পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। এর ব্যতিক্রমে বিশ্বাস করা শিরক। (সূরা আনফাল- ৮:২৪) (তিরমিজি- ৩৫২২)


31. যাদু-টোনা, বাণ মারা।


32. ওরশ : অনেক মাযারে ও পীরের দরবারে অমাবস্যা, পূর্ণিমা, পীরের জন্ম বা মৃত্যু তারিখ নির্দিষ্ট করে ওরশ হয়ে থাকে। বেপর্দা অবস্থায় নারী-পুরুষ একত্রে বসে যিকির করে, কাওয়ালী গান শোনে। ভন্ড পীর, ফকীররা এ সব ওরশে ওয়ায নসীহ’তের নামে শরী‘আত বিরোধী আক্বীদা-বিশ্বাস প্রচার করে। শাহী তবারক রান্না করা হয়। ওরশের পরে যে টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়, তা পীর ও তার খাদেমদের পকেটে চলে যায়। ওরশ মূলতঃ আনন্দোৎসব ও টাকা উপার্জনের পন্থা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।


33. খাজা বাবার ডেগ :একদল লোক বিশেষত যুবকেরা রজব মাস এলেই পথে-ঘাটে, বাজারে যেখানেই সুযোগ পায় সেখানেই একটা ডেগ বা বড় হাড়ি বসায়। লালসালু কাপড় বিছিয়ে, বাঁশ দিয়ে ছাউনি দিয়ে, বিজলী বাতি জ্বালিয়ে, চকমকি কাগজ এবং বিভিন্ন ধরনের রং লাগিয়ে ঘর সাজিয়ে তার মধ্যে স্থাপন করে ডেগ। তারা একে বলে ‘খাজা বাবার ডেগ’। এটা একটা বিনা পুজির ধর্মব্যবসা।


34. ন্যাংটা বাবায় বিশ্বাস: এরুপ বিশ্বাস করা যে ন্যাংটা বাবা ভবিষ্যত বা গায়েব জানেন তার ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা আছে ।


35. প্রাণীর ছবি, চিত্র, প্রতিকৃতি, মূর্তি, ভাস্কর্য,প্রতিমা ইত্যাদির হুকুম : কোন নেতা, লিডার বা স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিবর্গের ছবি, চিত্র, প্রতিকৃতি, মূর্তি ভাস্কর্য ইত্যাদি তৈরি করা, মাঠে-ঘাটে, অফিস-আদালতে ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এগুলো স্থাপন করা, এগুলোকে সম্মান করা, এগুলোর উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ ইত্যাদি করা।


36. সমাধি, স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার : সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের স্মরণে সমাধি, স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ বা শহীদ মিনার নির্মাণ, এগুলোকে সম্মান জানানো, সামনে দাঁড়িয়ে নীরবতা ১ মিনিট পালন করা ইত্যাদি।


37. অগ্নিপূজা এবং শিখা চিরন্তন, শিখা অনির্বাণ : ‘অগ্নি শিখা’ অগ্নিপূজকের উপাস্য দেবতা। তারা ভক্তি, প্রণাম ও নানা কর্মকান্ডের দ্বারা আগুনের পূজা করে থাকে। এ অগ্নিপূজা সম্পূর্ণ শিরক ও আল্লাহদ্রোহী কাজ। ‘শিখা চিরন্তন’ বা ‘শিখা অনিবার্ণের’ নামে অগ্নি মশালকে সারা দেশে ঘুরিয়ে ভক্তি শ্রদ্ধা জানানো এবং এগুলোর প্রজ্জ্বলনকে অব্যাহত রাখার জন্য বিশেষ ধরনের বেদীর ওপর এগুলো স্থাপন করা, অলিম্পিক মশাল সহ বিভিন্ন ক্রীড়ানুষ্ঠানের মশাল প্রজ্জ্বলনও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।


38. মঙ্গল প্রদীপ : হিন্দুদের অনুকরণে কোন অনুষ্ঠানের শুরুতে বা কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা পালন করা।


39. তাছাওউফের শায়েখ বা পীরের কল্পনা : তাছাওউফের শায়খ বা পীরের চেহারা, আকৃতি ইত্যাদি কল্পনা করে মোরাকাবা, ধ্যান, যিকির বা অন্য যে কোন ইবাদত করা শিরক।


40. গায়রুল্লাহর নামে যিকির বা অযীফা : আল্লাহর যিকিরের ন্যায় কোন নাবী বা রসূল, পীর, ওলী-আওলিয়া, বুযুর্গ, আলিমের নাম জপ করা, বিপদের পড়লে তাদের নামের অযীফা পড়া। যেমন- ‘ইয়া রাহমাতুল্লিল আলামীন’, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ’, ‘নূরে রাসূল, নূরে খোদা’, ‘হক বাবা, হক বাবা’ ইয়া বড়-পীর আব্দুল কাদির জিলানী, ইয়া গাউছুল আযম, ইত্যাদি।


41. আল্লাহ যা করান, তাই করি : একদল ফকীর বলে, আল্লাহ যা করান, তা-ই করি। আল্লাহ ছালাত আদায় করান না, তাই আদায় করি না , আল্লাহ গাঁজা টানাচ্ছেন, তাই টানি। তাক্বদীরে ছালাত থাকলে তো আদায় করব।


42. সীনায় সীনায় মা‘রেফতী : ভন্ডপীর বা দরবেশ দাবীদার একদল লোক বলে থাকে, ‘কুরআন শরীফ মোট ৪০ পারা। ৩০ পারায় যাহেরী ইলমের বিষয় আছে। বাকি ১০ পারা মারেফতী বিদ্যায় ভরা রয়েছে। এ ১০ পারা আমরা সীনায় সীনায় পেয়েছি। শরী‘আতের আলিমরা এগুলোর খবর রাখেন না।


43. শরী‘আতের ইত্তেবা সর্বাবস্থায় ফরয নয় : অনেকের ধারণা, মুরীদ যখন মা‘রেফাতের উচ্চ শিখরে পৌঁছে যায়, তখন তার জন্য শরী‘আতের হুকুম-আহকাম, ছালাত, ছওম ইত্যাদি মাফ হয়ে যায়।


44. শিরকের গন্ধযুক্ত উপাধি : পীর বা ওলীকে এমন কোন উপাধিতে সম্বোধন করা উচিত নয় যা অর্থগত দিক দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার জন্য প্রযোজ্য। যেমন- গাউছুল আযম (সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী), গরীবে নেওয়াজ (গরীবরা যার মুখাপেক্ষী), মুশকিল কোশা (যার মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হয়), কাইয়ূমে যামান (যামানা কায়েম করেছেন যিনি) ইত্যাদি


45. সন্তানের নামকরণে নবী ও পীর-আওলিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপন : গোলাম মুছত্বফা (মুছত্বফার গোলাম), আব্দুন্নবী (নবীর দাস), আব্দুর রসূল (রসূলের দাস), আলী বখশ (আলী (রা)-এর দান), হোসেন বখশ (হুসাইন (রা)-এর দান), পীর বখশ (পীরের দান), মাদার(‘মাদার’-কে বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলের হিন্দুরা বড় ঋষি বলে জানে।) বখশ (মাদারের দান), গোলাম মহিউদ্দীন (মহিউদ্দীনের গোলাম), আব্দুল হাসান (হাসানের গোলাম), আব্দুল হুসাইন (হুসাইনের গোলাম), গোলাম রসূল (রসূলের গোলাম), গোলাম সাকলায়েন ইত্যাদি নাম রাখা।


46. মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন : সিলভা, কোয়ান্টাম বা অন্য কোন মেথডের (পদ্ধতি) দ্বারা মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো এবং সকল সমস্যার সমাধান লাভ করার মাধ্যমে জীবনে সফলতা অর্জন করার কথা বলা।


47. গ্রহ নক্ষত্রের তা‘ছীর (প্রভাব): অনেকের ধারণা মানুষের ভাল-মন্দ, বিপদ-আপদ, উন্নতি-অবনতি ইত্যাদি গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে হয়। কেউ বিপদে পড়লে বলা হয়, ‘এ ব্যক্তির ওপর শনি গ্রহের প্রভাব পড়েছে’বা রাহুগ্রাস হয়েছে। কারো আনন্দের খবর শুনলে বলা হয়ে থাকে, ‘এ ব্যক্তি মঙ্গল গ্রহের নজরে সু নজরে আছে’।


48. চন্দ্র ও সূর্য্য গ্রহণের প্রভাব : অনেকের ধারণা চন্দ্র ও সূর্য্য গ্রহণ মানুষের ভাল-মন্দ, জন্ম-মৃত্যু, বিপদ-আপদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।


49. গাইরুল্লাহর নামে কসম করা : আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে কসম করল, সে কুফরী করল অথবা শিরক করল’। (হাদীছ ছহীহ। তিরমিযী, হা/১৫৩৫)।মূলত আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন নামে কসম করলে কসম হয় না। যেমন- রসূলুল্লাহর কসম, কা‘বা ঘরের কসম, নিজ চোখের কসম,বাবা-মায়ের কসম, বিদ্যা বা বই এর কসম ইত্যাদি।


50. আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পীর, ওলী বা বুযুর্গ ব্যক্তির অসীলা গ্রহণ : আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে, ক্ষমা ও সাহায্য পাওয়ার জন্য কোন জীবিত বা মৃত পীর, ওলী বা বুযুর্গ ব্যক্তিকে অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা ।


51. আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জীবন বিধান প্রণেতা- আল্লাহ তাআলাই একমাত্র মানব জাতির সার্বিক উন্নতির জন্য আইন বিধানের অধিকার রাখেন। এ কাজের যোগ্য তিনি ছাড়া আর কেউ নন। (সূরা ইউসুফ-১২:৪০) কোনো ব্যক্তি, শক্তি, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন অথবা কোনো দল যদি আল্লাহর দেয়া বিধানের হালালকে যদি হারাম করে আর হারামকে হালাল করে তা মেনে নেয়া শিরক। যেমন: গণতন্ত্র মেনে নিয়ে আল্লাহর আইনকে বাদ দিয়ে মনগড়া আইন তৈরী করে ।


52. মানব রচিত বিধান দ্বারা শাসন করা, এমনিভাবে প্রথা ও চিরাচরিত অভ্যাস দ্বারা ফায়সালা করা।


53. পাশ্চাত্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, পুজিবাদ, জাতিয়াতাবাদ,প্রগতিবাদ ধর্মনিরপেক্ষবাদ সমর্থন ও বিশ্বাস করা।


54. মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন জায়গায় অবস্থান করা/ খাদেম হওয়া- মাজারে খাদেম হওয়া শিরক। (বাকারাহ-২:১২৫)


55. কুরআনের বিকুতি ঘটেছে এমন ধারনা করা বা এ ধারনা করা যে কুরআন ৯০ পারা। ৬০ পারা গোপন রয়েছে।


56. দ্বীন ইসলামের ভিতর শরীয়ত মারেফত, হাক্বীক্বত, তরীক্বত নামে ভাগাভাগি সৃস্টি করা। ইসলামী শরীয়ত ছাড়া সব কুফরী।


57. পীর ধরা ওয়াজিব । যার পীর নাই তার শির নাই। যার পীর নাই তার পীর শয়তান, এসব কথা বলা ও বিশ্বাস করা।


58. মাজারের পার্শ্বস্থ গাছ, পুকুরের মাছ, কচ্ছপ কুমিরকে কথিত ওলির সংশ্লিস্ট কিছু মনে করা ও তাদের খাবার দেআ। এবং তাদের খাবার গ্রহনকে সৌভাগ্য মনে করা।


59. পীর-মুরশিদ, রাষ্ট্রীয় নেতা-নেত্রীদের ভক্তি সম্মানের উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা।


60. নাবী (সা) জীবিত রয়েছেন এমন বিশ্বাস পোষন করা।


61. নাবী (সা) কে হাজির নাযির মনে করা।


62. কাশফ, ইলহাম, মুরাকাবা, মুশাহাদাহর দাবী করা ও চর্চ্চা করা।


মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফফান কর্তৃক সংকলিত শিরকের তালিকা নিম্নরুপ:

63. আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা।


64. আল্লাহর মত করে অন্য কোন স্বত্তাকে বিনীত ও সম্মানের সাথে মুহাব্বত করা।


65. যে বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ সামর্থ রাখে না, সে ক্ষেত্রে অন্যের উপর ভরসা করা, যেমন : প্রয়োজন পূরণের জন্য মৃত ও অনুপস্থিত কোন স্বত্তার উপর ভরসা করা।


66. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুকে যেমন: প্রতিমা, মূর্তি, আস্তানা, দরগাহ বা কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তি, অনুরুপ অনুপস্থিত জ্বিন ও মানুষকে গোপনে গোপনে ভয় করা।


67. বিপদ-আপদ ও বদনজর থেকে মুক্তির জন্য তাবীজ-কবজ ঝুলানো (মুসনাদে আহমাদ ৪র্থ খন্ড, পৃ: ১৫৪) সূতা-বালা বা অনুরুপ কিছু পরিধান করা। (মুসনাদে আহমাদ ৪র্থ খন্ড, পৃ: ১৫৬, ইবনে মাজাহ হা: নং ৩৫৩১)


68. হালাল-হারাম ও বিচার-ফায়সালার ক্ষেত্রে আলিম, পীর, ইমাম,দরবেশ ও শাসকদের অন্ধভাবে অনুসরণ । (সূরা তাওবা: ৯:৩১)


69. কোন কিছুতে ‍অশভ বা কুলক্ষন মনে করা বা কোন কিছু দ্বারা নির্ণয় করা। যেমন: বিকলাঙ্গ, পেচা বা অপছন্দনীয় কিছু দেখলে অশুভ মনে করা।

70. সুনাম অর্জনের জন্য লোক দেখানে বা শুনানো ইবাদত (রিয়া) করা।


71. আমল-ইবাদত নিছক দুনিয়ার জন্য করা।


72. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো বা কিছুর জন্য সিজদা বা মাথানত করা। যেমন: কদম বুচি করা।


73. আল্লাহর সিফাত সমূহে শিরক করা; যেমন আল্লাহর মতো ‍অন্য কাউকে পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু, রিযিকদাতা, বিধানদাতা এবং ক্ষমাশীল মনে করা।


74. আল্লাহ ব্যতীত কোন জ্বীন, ওলী, পীর-ফকির ইত্যাদির নিকট ফরিয়াদ ও সাহায্য প্রার্থনা, তাদের উপর ভরসা, তাদের উদ্দেশ্যে মান্নত ও জবাই করা।


75. কবরের চারপাশে তাওয়াফ করা।


76. হেদায়েত, শাফায়াত ও মুক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট কামনা করা।


77. পীর-ফকীর ও কবিরাজের শয়তানী তেলেসমাতি ও কারসাজীকে ওলীর কেরামত মনে করা।


78. কুরআন-হাদীস ভিত্তিক আলিমদের অনুসরণ ছেড়ে দিয়ে পীর ধরা ও তার অন্ধানুসরণ করা।


79. নাবী, ওলী-আউলিয়া ও পীর-বুযুর্গদের জন্য নামায ও অন্যান্য ইবাদত করা। [মূল: আল-ইসলাহ সিরিজ -৪ ,সংকলনে –মুহাম্মদ আব্দুর রব আফফান]


আসুন, আমরা সকলে ঈমানী দায়িত্ব পালন করি। মানুষকে শিরক মুক্ত ঈমানের আহ্বান জানাই।

নাবী ও ওলীদেরকে মহান আল্লাহ পাকের বৈশিষ্ট্যের সমকক্ষ না করি।

রাষ্টীয় ক্ষমতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেশের জনগণকে সকল ক্ষমতার মালিক বলে মনে না করি।

কোন ভাস্করয্য,মূর্তি,শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য নিরবে দাঁড়িয়ে না থাকি।

গনতন্ত্র,পীরতন্ত্র,রাজতন্ত্র,সমাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষবাদকে না বলি ও প্রত্যাখান করি ও বাদ দেই।

মাজার ও কবরে নযর-মানত না করি।

মাজার ও কবরে গিয়ে মাজার ও কবর মুখী হয়ে দোয়া ও নামায না করি।

বিপদাপদ-বালামুছীবাতে, রিং, পৈতা,সূতা,শরীরে বাঁধা থেকে দূরে থাকি।

হাদীসে বর্ণিত দোয়া, আমলে আনার চেষ্টা করি।

গণক ও জোতির্বিদদের নিকট গমণ থেকে দূরে থাকি।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানতেন এ-আক্বীদা-বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকি।

হে আল্লাহ! আমাদের শিরক মুক্ত জীবন দান করুন। আমীন।

শিরক সম্পর্কে সর্বদা মনে রাখার মতো কথা হল :

জীবন বিপন্ন হ’লেও শিরক করা যাবে না।

শিরকের পাপের কোন ক্ষমা নেই ।

শিরকের পরিণতি ধ্বংস ।

শিরক সমস্ত নেক আমলকে বিফল করে দেয়।

মুশরিকরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী।

মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নিষেধ।

শিরক মিশ্রিত ঈমান কখনোই ঈমান হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

সুতরাং, শিরক থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবসময় আল্লাহ তা‘আলার নিকটে প্রাণখুলে দো‘আ করা ও সাহায্য প্রার্থনা করা কর্তব্য। রসূল (সা) শিরক হ’তে বাঁচার জন্য আমাদেরকে দো‘আ শিখিয়েছেন:

اَللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوْذُبِكَ أَنْ نُشْرِكَ شَيْئًا نَعْلَمُهُ وَنَسْتَغْفِرُكَ لَمَا لاَ نَعْلَمُ

‘আল্লাহুম্মা ইন্না না‘ঊযুবিকা আন নুশরিকা শাইআন না‘লামুহ, ওয়া নাসতাগফিরুকা লিমা লা না‘লামুহ।

“হে আল্লাহ্, জেনে বুঝে শিরক করা থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আমাদের অজ্ঞাত শিরক থেকে আপনার নিকটে ক্ষমা চাচ্ছি।” ( সহীহ-আদাবুল-মুফরাদ-৭১৬)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ছোট-বড় সকল প্রকার শিরক হ’তে রক্ষা করুন, আমীন!


পরবর্তী অংশ.....

সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০২০

ইসলামে ফরজ কয়টি?

 ইসলামে ফরজ কয়টি? ১৩০টি?


ফরজের সংখা নিয়ে মতভেদ রযেছে। অধিকাংশ ওলামায়েকেরামের মতামতের ভিতিতে ১৩০ ফরজের  বর্ণনা দেওয়া হলো :


মুসলমানের পাচ রোকনে ৫ফরজ :


১। কালিমা।
২। নামাজ।
৩। রোজা।
৪। হজ্জ ও 
৫। যাকাত।


চার কুরসীতে ৪ ফরজ : 

 

১। আব্দুল মান্নাফের পুত্র হাশেম।
২। হাশেমের পুত্র আব্দুল মুতালিব।
৩। আব্দুল মুতালিবের পুত্র আব্দুল্লাহ ও 
৪। আব্দুল্লাহর পুত্র হজরত মুহাম্মদ (সা:)।


কতক আলিমের মতে চার মাযহাবে ৪ ফরজ :


১। হানাফী মাযহাব।
২। সাফেয়ী মাযহাব।
৩। হাম্বলী মাযহাব ও 
৪। মালেকী মাযহাব।


পাচ ওয়াক্ত নামজের নিয়তে ৫ ফরজ :


১। ফজর।
২। জোহর।
৩। আসর।
৪। মাগরিব ও 
৫। এশার।


পাচ ওয়াক্ত নামাজের সতেরো রাকআতে ১৭ ফরজ :


১। ফজরের ২ রাকআত।
২। জোহরের ৪ রাকআত।
৩। আসরের ৪ রাকআত।
৪। মাগরিবের ৩ রাকআত ও 
৫। এশার ৪ রাকআত।


ঈমানের ৭ ফরজ :


১। আল্লাহর  ঈমান আনা।
২। তার প্রেরিত রাসূলের ওপর ঈমান আনা।
৩। আল্লাহর ফেরেশতাদের ওপর ঈমান আনা।
৪। আল্লাহর কিতাব সমূহের ওপর ঈমান আনা।
৫। তাকদীরের ওপর ঈমান আনা।
৬। মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত হওয়ার ওপর ঈমান আনা ও 
৭। কিয়ামতের ওপর ঈমান আনা।


অজুতে ৪ ফরজ :


১। সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করা।
২। উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
৩। মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসাহ করা ও  
৪। উভয় পায়ের গিরাসহ ধৌত করা।


গোসলে ৩ ফরজ :


১। কুলি করা।
২। নাকের ছিদ্রের ভিতরে পানি পৌছানো।
৩। সর্বাঙ্গ উওমরূপে ধৌত করা।


পাচ কালিমায় ৫ ফরজ :


১।কালিমায়ে তাইয়েবা।
২। কালিমায়ে শাহাদাত।
৩। কালিমায়ে তামজীত।
৪। কালিমায়ে তাওহীদ ও 
৫। কালিমায়ে  রদ্দেকূফর।


তায়াম্মুমে ৩ ফরজ :


১। নিয়ত করা।
২। সমস্ত মুখমন্ডল মাসাহ করা ও 
৩। উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা।


নামজের পূর্বে আরকানে ৬ ফরজ :


১। জায়গা পাক।
২। শরীর পাক।
৩। পোশাক পাক।
৪। সতর ঢাকা।
৫। কেবলামুখি হয়ে দাড়ানো ও 
৬। নিয়ত করা।


নামাজের ভিতর সাত আহকামে ৭ ফরজ :


১। তাকবীরে তাহরীমা বাধা।
২। দাড়িয়ে নামাজ পড়া।
৩। নামজের ভিতর কেরাত পাঠ করা।
৪। রুকুতে যাওয়া।
৫। সিজদা করা।
৬। আত্তাহিয়াতু পাঠ করার সময় বসা ও 
৭। সালামের সাথে নামাজ শেষ করা।


ত্রিশ রোজায় ৬০ ফরজ :

ত্রিশ রোজায় ৩০ ফরজ এবং 

ত্রিশ রোজার নিয়তে ৩০ ফরজ।


Fb: Muhammad Shaon